একটি সিনেমার গল্প সিনেমার চিত্রনাট্যকার, প্রযোজক, অভিনেতা ও পরিচালক (নয়বার জাতীয় পুরষ্কারপ্রাপ্ত) অভিনেতা আলমগীর। সিনেমা জগতে কলাকুশলীদের জীবনের সাধারণ গল্প চিত্রায়নে ‘একটি সিনেমার গল্প’ তৈরির চেষ্টা। বাংলাদেশের সিনেমা শিল্প এখন মৃতপ্রায়। সারা দেশে সলতের শেষের আগুনের মৃদু আলোতে জ্বলছে শ’দুয়েক সিনেমা হল। এমনও বছরআমাদের দেখতে হয়, যে বছরে কোনো একটি সিনেমার নামও মুখে মুখে ছড়ায় না। আগের দিনের মতো সিনেমার গান জনপ্রিয়তার ঢেউ তোলে না। দর্শক বিমুখ সময় কাটাচ্ছে এই সিনেমা শিল্প।এ শিল্পে প্রযোজক, পরিচালক আর পরিবেশকদের বেয়াড়া আচরণে ক্রমে দর্শক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে।

এখন প্রমাণ দিতে হয় এ সিনেমা আমাদের গল্পগাঁথা, দক্ষিণ ভারতের কয়েকটা সিনেমার কাটা অংশ না। আমাদের সিনেমা মুক্তির আগে পরিচালক উচুস্বরে বলতে থাকেন, ‘এটা একটি মৌলিক কাহিনীর সিনেমা।’ অসহায়ত্বটা বেশ বোঝা যায়। একটা দর্শকনন্দিত সিনেমার কাহিনী বিদেশি গল্প থেকে ধার করা হলে ক্ষতি নাই। লোকসাহিত্য দর্শকদের আবেগাপ্লুত করে তুলতে পারে। এই সিনেমায় গল্পের চলন দেখে মনে হয়েছে ,খুব অল্প আয়োজনে সিনেমা তৈরি করার একটা প্রয়াস, তাই এমন গল্প খুঁজে ফেরা।

‘একটি সিনেমার গল্প’ সিনেমায় অভিনয় করেছেন- ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, আরিফিন শুভ, আলমগীর, চম্পা, সাবেরী আলম, সাদেক বাচ্চু প্রমুখ। একটা সময় আমাদের সিনেমা জগতে ঋতুপর্ণা দারুণ পরিচিত মুখ ছিলেন। বহুদিন পর, সেই পরিচিত মুখের ভারতীয় নায়িকা এ সিনেমায় যুক্ত হয়েছেন। আমাদের অস্থির জীবনে প্রতিদিন যানজটে যেমন আমরা স্থির হয়ে যাই, ঠিক তেমনই দারুণ শান্ত পরিবেশে বড় ঢিমে লয়ে সবাই অভিনয় করেছেন। যেহেতু প্রেমের যাতনা, তাই কলাকুশলী সীমিত রেখে এ সিনেমায় শক্ত ডালপালা ছেড়ে দেবদারু গাছের মতো ওপরের দিকে গিয়ে শেষ হয়েছে। চরিত্র চিত্রণে যেহেতু কোনো আগ্রহ ছিল না,তাই আমাদের একজন সিনেমা পরিচালক,নায়ক, নায়িকাদের জীবনের খুব ভাসা ভাসা অংশ দেখে ভিনগ্রহের মানুষ দেখার অনুভূতি হয়। বহুগামী সাধারণ প্রেমের ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র অনুভূতি নিয়ে সিনেমা শুরু করেছি,তাই এই মানুষগুলোর আবহ তৈরির প্রয়োজন হয় নাই। অনেকটা রীতি নীতির মতো গল্প শুরু হয়।সিনেমা পরিচালকের সঙ্গে সিনেমার নায়িকার প্রেম বা নায়িকার সঙ্গে নায়কের প্রেম। খুব সরলভাবে চিত্রায়িত বা গল্পের চলন দেখে অবাক হতে হয়,যে নায়িকার বাবা মদ্যপ,নায়ক মদ্যপ এবং নায়িকা মদ্যপ।এ শিল্প কি এভাবেই লালন হয়? নাকি বিশেষ কতগুলো পরিবার কাকতলীয়ভাবে এক মোহনায় একাকার?

সিনেমা আকালের সময়ে কেন এমন সিনেমা নির্মাণ করতে হবে? সম্ভাব্য উত্তরগুলো এমন হতে পারে- দারুণ প্রেমের দহন দেখে দর্শক আবেগাপ্লুত হবে, এমন হৃদয়ের যাতনা কখনো এভাবে বহুগুণ বর্ধিত করে দেখা হয় নাই, এই ছোট পরিসরের সিনেমা খেলা দেখে অবাক হতে হবে, কারিগরী নির্দেশনা আর নির্মাণগুণ অনেক সিনেমা কর্মীকে উৎসাহিত করবে, দর্শকদের নতুন ঢল নামবে সিনেমা হলে।

এর একটি উত্তরও এ সিনেমায় নাই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here