রোহিঙ্গা ও কক্সবাজার এলাকার শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রাখতে বিশ্বব্যাংকের কাছে অনুদান চেয়েছে বাংলাদেশ। এরই মধ্যে সংস্থাটির কাছে আড়াই কোটি মার্কিন ডলার বা প্রায় ২০০ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে।
রিচিং আউট অব স্কুল চিলড্রেন দ্বিতীয় পর্যায় (রস্ক-২) প্রকল্পের আওতায় এ অর্থ ব্যয় করা হবে। প্রকল্পটির মেয়াদ ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। তবে ওইসব শিশুর লেখাপড়ার সহায়তায় প্রকল্পটির মেয়াদ ২ বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। সম্প্রতি অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ থেকে এ সংক্রান্ত একটি অনুদান প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বিশ্বব্যাংকের কাছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইআরডির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা উপসচিব জাহিদ হোসেন মুনশী যুগান্তরকে বলেন, ‘রস্ক-২ প্রকল্পের আওতায় সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের কাছে ২৫ মিলিয়ন ডলারের অনুদান সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
এ টাকায় শুধু রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যয় হবে তা নয়, কক্সবাজার এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা যারা রোহিঙ্গাদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের সন্তানদেরও লেখাপড়ার সুবিধা সৃষ্টিতে ব্যয় করা হবে।’
সূত্র জানায়, ১৬ জুলাই ইআরডি থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রাহিঙ্গা জনগোষ্ঠী সম্পর্কিত রস্ক-২ এবং ইউনিসেফ প্রস্তাবিত প্রকল্পের কয়েকটি বিষয়ে স্পষ্টীকরণের জন্য অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি দেয়া হয় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে। সেই চিঠি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
চিঠিতে বলা হয়, ‘২০১৩ সালে শুরু হওয়া রস্ক-২ প্রকল্পের মেয়াদ ডিসেম্বরে শেষ হবে। বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ায় কক্সবাজার ও এর আশপাশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়েছে।’
এ প্রেক্ষাপটে রস্ক-২ প্রকল্পটির মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোসহ বিশ্বব্যাংকের কাছে অনুদানের বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অনুরোধ জানানো হয় ইআরডিকে। ইআরডি থেকে সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের কাছে অনুদান সহায়তা চেয়ে অনুরোধ করা হয়।
প্রকল্পটির মেয়াদ বৃদ্ধির প্রস্তাবের সঙ্গে পজেশন পেপারও দেয়া হয়েছে। সেখানে ন্যাশনাল টাস্কফোর্স ফর অ্যাড্রেসিং রিফিউজি ক্রাইসিস ইন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা বিষয়ক তিনটি নির্দেশনার কথা উল্লেখ করা হয়।
এসব নির্দেশনার একটিতে বলা হয়, শিক্ষা সংক্রান্ত কার্যক্রম সমন্বয় করবে ইউনিসেফ। তবে প্রকল্পের কার্যক্রম এবং কম্পোনেন্টের মধ্যে রস্ক-২ ইউনিসেফের সঙ্গে পার্টনারশিপে কাজ করবে। এদিকে গ্লোবাল পার্টনারশিপ ফর এডুকেশনের (জিপিই) পেয়ার পারসন জুলিয়া গিলিয়ার্ড সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জানান, তারা আগে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অনুদান দিয়েছিল।
সেখান থেকে অব্যবহৃত ৮ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন ডলার রোহিঙ্গা শিশু, যুবক ও কক্সবাজার এলাকার স্থানীয় শিশুদের শিক্ষার প্রয়োজন মেটানোর জন্য ব্যয় করতে চান তারা। সেটি এখনও ইআরডিতে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সেই টাকা ব্যয় করা হবে ইউনিসেফের মাধ্যমে। সবকিছু মিলে এসব বিষয়ে স্পস্টীকরণ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে।
সূত্র জানায়, রস্ক-২ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হচ্ছে ১ হাজার ৮৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক সহজ শর্তে ঋণ দিয়েছে ১ হাজার ২৭ কোটি ১৭ লাখ টাকা। বাকি টাকা সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করা হচ্ছে।
দেশের ৫১ জেলার ১৪৮ উপজেলা এবং ১০টি সিটি কর্পোরেশনে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পিছিয়ে পড়া অনগ্রসর এলাকার সুবিধাবঞ্চিত ও গরিব পরিবারগুলোর স্কুলবহির্ভূত শিশুদের শিক্ষার সমান সুযোগ সৃষ্টি, ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের শিখন কেন্দ্রে ধরে রাখা ও মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষাচক্র সম্পন্ন করার মাধ্যমে নির্বাচিত এলাকায় স্কুলবহির্ভূত শিশুদের সংখ্যা কমিয়ে আনা।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম স্বাক্ষরিত সাম্প্রতিক এক সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে ১০ লাখ ৯৭ হাজার ৭৭১ জন রোহিঙ্গার।
এদের মধ্যে পুরুষ হচ্ছে ৪৮ শতাংশ এবং মহিলা ৫২ শতাংশ। এছাড়া শিশু রয়েছে ৫৫ শতাংশ, এতিমের সংখ্যা ৩৬ হাজার ৩৭৩ জন। এর মধ্যে ৭ হাজার ৭৭১ জন মা-বাবাকে হারিয়েছে। ১৮ হাজার মহিলা গর্ভবর্তী।
এরই মধ্যে শিশুর জন্ম হয়েছে ২৯ হাজার ২৮৯টি। এতে আরও বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের কারণে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর থেকে অক্টোবরের মধ্যে স্থানীয় হাজারও কৃষক তাদের জমির ধান থেকে কোনো ফসল পাননি। অনেকেই তাদের জমি হারিয়েছেন। উখিয়া ও টেকনাফের স্থানীয় জনগণের চেয়ে দ্বিগুণ রোহিঙ্গা আসায় জনসংখ্যাতাত্ত্বিক ভারসাম্যহীনতার সৃষ্টি হয়েছে।
সামাজিক যেসব অবকাঠামো রয়েছে, যেমন- রাস্তাঘাট, ব্রিজ, বাজার, হাসপাতাল ইত্যাদির সক্ষমতা নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া স্কুল, উপজেলা কমপ্লেক্স এবং কমিউনিটি সেন্টারসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নানা সংস্থা তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে বিঘœ ঘটছে।