শাসক দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের একটি মন্তব্য চলমান বৈরিতামূলক রাজনীতিতে কিছুটা হলেও আশার সঞ্চার করেছে।

ওবায়দুল কাদের শুক্রবার মন্তব্য করেছেন বিএনপির সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক ফোনালাপ হতে পারে। তার এ কথার সূত্র ধরে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ ফোন করলে তারাও করবেন।

দুই বড় দলের এই দুই গুরুত্বপূর্ণ নেতার বক্তব্যকে রাজনীতির বিশ্লেষকরা ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। দেশে দীর্ঘদিন থেকে দুই দলের মধ্যে সংলাপের প্রয়োজনীয়তার কথা বলে আসছেন অনেকেই। বিশেষত সুশীলসমাজের নেতৃবৃন্দ আলোচনার টেবিলে বসে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার কথা বলেছেন।

কিন্তু বিশেষত সরকারি দলের অনিচ্ছায় সেই সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে পারেনি। তবে নির্বাচন ঘনিয়ে আসার এই সময়ে শাসক দলের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মুখ থেকে ফোনালাপের প্রস্তাব আসায় গুমোট পরিস্থিতিতে কিছুটা হলেও স্বস্তি দেখা দিয়েছে।

বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, তারা যে কোনো সময় সংলাপে বসতে প্রস্তুত।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক যদিও আনুষ্ঠানিক সংলাপের কথা বলেননি; কিন্তু তার অনানুষ্ঠানিক সংলাপের প্রস্তাবের ভিত্তিতে দুই দলের মধ্যে ফোনালাপ শুরু হলে সেই আলাপ টেবিল পর্যন্তও গড়াতে পারে বৈকি।

তবে সেক্ষেত্রে দুই দল, বিশেষত সরকারি দলের আন্তরিকতা ও শুভবুদ্ধিই হতে পারে ঘটনাপ্রবাহের নিয়ামক। এটা ঠিক, এ পর্যন্ত সংলাপের মাধ্যমে সংকট থেকে উত্তরণের কোনো দৃষ্টান্ত স্থাপন হয়নি।

চারদলীয় জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল ও বিএনপির মহাসচিব আবদুল মান্নান ভূঁইয়ার মধ্যে সংলাপ অনুষ্ঠিত হলেও শেষ পর্যন্ত তা ফলপ্রসূ হতে পারেনি।

এজন্য দায়ী ছিল রাজনৈতিক অবস্থান থেকে সরে না আসার অনমনীয়তা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমরা বলব, পূর্বনির্ধারিত ধারণা কিংবা অনমনীয়তা থাকলে ফোনালাপ কিংবা টেবিলের আলোচনার কোনো মানে হয় না।

দুই দল যদি সত্যি সত্যি একটি সমঝোতায় পৌঁছতে চায়, তাহলেই কেবল এ ধরনের আলোচনার সূত্রপাত করা যেতে পারে। অন্যথায় লোক দেখানো ফোনালাপ কিংবা টেবিলের সংলাপ হাসির খোরাকের অতিরিক্ত কিছু হবে না।

দেশ রাজনৈতিকভাবে সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আগামী নির্বাচনটি আদৌ অংশগ্রহণমূলক হবে কিনা, হলেও তা কতটা সুষ্ঠু হবে, এসব নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন।

ওবায়দুল কাদেরের মন্তব্য এসব প্রশ্নের সদুত্তরের একটি পটভূমি তৈরি করতে পারে। আর সেটা সম্ভব হলে রাজনৈতিক নেতৃত্ব অবশ্যই দেশবাসীর সাধুবাদ পাবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here