বর্তমানে বিশ্ববাজারে দেশের রফতানিযোগ্য পণ্যের সংখ্যা ৭৪৪টি। ১৯৮টি দেশে এসব পণ্য রফতানি হচ্ছে। এর মধ্যে মোট রফতানি বাণিজ্যে তৈরি পোশাক খাতই এককভাবে অবদান রাখছে ৮১ শতাংশ।
রফতানি খাতে বাকি পণ্যগুলোর ভূমিকা হতাশাজনক। একই দশা রফতানি গন্তব্যেরও। বিশ্বে বাংলাদেশের পণ্য রফতানির জন্য ১৯টি রফতানি অঞ্চল রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একটি অঞ্চল থেকেই দেশের মোট রফতানি আয়ের ৬১ ভাগ আসছে।
বাকি ৩৯ শতাংশ আয় আসছে ১৮ রফতানি অঞ্চল থেকে। এর মধ্যে কোনো কোনো অঞ্চলে পণ্য রফতানি থেকে আয়ের পরিমাণ কোটি ডলারেরও কম। সদ্য বিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের অঞ্চলভিত্তিক অর্জিত রফতানি আয়ের সার্বিক চিত্র পর্যালোচনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
বাণিজ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রতি বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের প্রাথমিক স্তরে উন্নীত হয়েছে।
চূড়ান্ত উত্তরণের জন্য দরকার রফতানি বাজার সম্প্রসারণ। একই সঙ্গে প্রয়োজন তৈরি পোশাকের রফতানি বৃদ্ধি এবং এর ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণ। সরকার এবং রফতানিকারকরা
যৌথভাবে পণ্যের রফতানি বাজার সম্প্রসারণ ও বহুমুখীকরণের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে বাজার সম্প্রসারণের এ চেষ্টা খুবই সীমিত। ফলে একটি-দুটি অঞ্চল ও গুটিকয়েক দেশ ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য বাজার থেকে বাংলাদেশের রফতানি আয় আসার পরিমাণ খুবই হতাশাজনক।
পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আফ্রিকান অঞ্চলে ৪২টি দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য আছে। অথচ সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে সবক’টি দেশে সম্মিলিত রফতানি আয় এসেছে মাত্র ৩২ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
এখানকার বেশিরভাগ দেশের সঙ্গেই রফতানি বাণিজ্যের হার মাত্র কয়েক কোটি ডলারের। আমেরিকান অঞ্চলে ৩২টি দেশ থেকে অর্জিত রফতানি আয়ের পরিমাণ ৭৬৮ কোটি ২৫ লাখ ৪৫ হাজার ডলার।
এর মধ্যে এককভাবে যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকেই ৫৯৮ কোটি ৩৩ লাখ ১৪ হাজার ৯৭৪ ডলারের রফতানি আয় পাওয়া গেছে। এর বাইরে কানাডায় রফতানি হয়েছে ১১১ কোটি ৮৭ লাখ ১৯ হাজার ৪৩৭ ডলারের পণ্য। বাকি ৩০টি দেশের বেশিরভাগের সঙ্গেই রফতানি বাণিজ্য রয়েছে নামেমাত্র। এ অঞ্চলের অন্যতম দেশ আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল।
ফুটবলের জনপ্রিয়তা ও সমর্থনের দিক থেকে দেশ দুটি বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষকে দু’ভাগে বিভক্ত করলেও তার প্রতিদান দিচ্ছে না সে দেশের ক্রেতা-ভোক্তারা। এ দুই দেশে রফতানি বাণিজ্যের পরিমাণ ২০ কোটি ডলারেরও কম। আসিয়ান অঞ্চলে ১০টি দেশ রয়েছে।
দেশগুলো হচ্ছে- ব্রুনাই, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, লাওস ও ভিয়েতনাম। এসব দেশ থেকে রফতানি আয় এসেছে ৫৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার। এর মধ্যে মালয়েশিয়ায় সর্বোচ্চ রফতানির পরিমাণ ২৩ কোটি ২৪ লাখ ২১ হাজার ৭২৩ ডলার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হচ্ছে সিঙ্গাপুর, যার বাণিজ্য পরিমাণ ১২ কোটি ৫৭ লাখের কিছু বেশি।
এশিয়ান অঞ্চলে ৩০টি দেশের সঙ্গে মোট রফতানি বাণিজ্য হয়েছে ৪১১ কোটি ৩০ লাখ ২২ হাজার ডলার। সবচেয়ে বেশি রফতানি হয়েছে জাপানে। এ বাজারে রফতানির পরিমাণ ১১৩ কোটি ১৯ লাখ ডলারের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভারতে মাত্র ৮৭ কোটি ৩৩ লাখ ডলার ও তৃতীয় সর্বোচ্চ চীনে ৬৯ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পণ্য।
বিমসটেকভুক্ত ভুটান, ভারত, শ্রীলংকা, নেপাল, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড- এ ৬টি দেশের মধ্যে সর্বমোট রফতানি বাণিজ্য মাত্র ১০১ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলারের। এর মধ্যে প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে ৮৭ কোটি ৩৩ লাখ ডলারের রফতানির অংশ বাদ দিলে অন্য দেশগুলোর সঙ্গে রফতানি আয়ের চরম দৈন্যতা দেখা যায়।