শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি বন্ধ রেখেছেন ব্যবসায়ীরা।
চলতি বাজেটে চাল আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে ২ থেকে ২৮ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে পূর্বনির্ধারিত কম শুল্কে বেশি চাল আমদানি করে বিপাকে পড়েছেন বন্দরের চাল আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা। ৬ জুন থেকে এ পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দরে আটকা পড়ে আছে ভারত থেকে আমদানি করা প্রায় ৯ হাজার টন চাল। ভারত থেকে চাল আমদানি না হওয়ায় দিনাজপুরের বাজারে বাড়তে শুরু করেছে চালের দাম। দিনাজপুরের প্রধান চালের বাজার বাহাদুরবাজার এনএ মার্কেটের চাল ব্যবসায়ী লিয়াকত আলী জানান, কয়েক দিনে বাজারে চালের দাম কেজিপ্রতি ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে।
দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর সূত্রে জানা গেছে, দেশে চালের ঘাটতি মোকাবেলায় গত বছরের ২০ জুন আমদানি শুল্ক ২৮ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ নির্ধারণ করে সরকার।
এরপর গত বছরের ২৪ আগস্ট চালের আমদানি শুল্ক আরেক দফা কমিয়ে ১০ শতাংশ থেকে ২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এতে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে
বেড়ে যায় চাল আমদানি। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার
আগে বিদেশ থেকে চাল আমদানিতে মাত্র ২ শতাংশ শুল্ক দিতে হতো। চলতি বাজেটে সেই শুল্ক বাড়িয়ে আবার ২৮ শতাংশ করা হয়েছে। আমদানি শুল্ক বাড়ানো হবে জেনে বাজেটের আগে ৬ জুন পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে চাল আমদানি বাড়িয়ে দেন চাল ব্যবসায়ীরা। কিন্তু সংসদে ৭ জুন বাজেট অধিবেশন শুরুর আগ পর্যন্ত সব চাল ছাড় করাতে পারেননি তারা। বাজেট অধিবেশনের আগে ৬ জুন বুধবার দুপুর থেকে এনবিআর তাদের সার্ভার বন্ধ করে দেয়। ফলে হিলি স্থলবন্দরের কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে যায়। আর এতে আটকা পড়ে ৯ হাজার টন চাল।
হিলি স্থলবন্দরের চাল আমদানিকারক মামুনুর রশীদ লেবু জানান, শুল্ক বৃদ্ধি করায় এখন ভারত থেকে চাল আমদানিতে আমাদের প্রতি কেজিতে খরচ পড়বে ৪৫ টাকার ওপরে। এ কারণে চাল আমদানি একেবারে বন্ধ রেখেছি। শুল্ক বাড়ার সুযোগে মিলাররাও দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
হিলি স্থলবন্দরের আরেক চাল আমদানিকারক হারুন-উর রশীদ হারুন জানান, ৪ জুন এক অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহম্মেদ বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য মজুত রয়েছে। কৃষক যাতে ধানের ন্যায্য মূল্য পান, সেজন্য সরকার এবারের বাজেটে চাল আমদানির ওপর আগের মতো ২৮ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
এ ঘোষণার পর যাদের চালের এলসি খোলা ছিল এবং চালের ট্রাক পাইপলাইনে ছিল, তারা ৫ ও ৬ জুনের মধ্যে তা বন্দরে ঢুকিয়ে খালাসের চেষ্টা করেন। কিন্তু বাজেটের আগের দিন ৬ জুন বিকাল ৩টার পর থেকে এনবিআর সার্ভার বন্ধ রাখায় তারা চালগুলো খালাস করতে পারেননি। এরপর ৭ জুন বাজেট ঘোষণা।
তারপর শুক্রবার ছুটি থাকায় কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ফলে তাদের পণ্যগুলো তিন দিন আটকা ছিল। এখন ভারতীয় ট্রাকগুলোর জন্য তাদের প্রতিদিন ২ হাজার টাকা করে ডিটেনশন চার্জ গুনতে হচ্ছে। অপরদিকে বন্দরের চার্জও বেড়ে উঠছে।
হিলি বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় থাকা চালের আমদানিকারক রেজাউল ইসলাম জানান, বাজেটের আগেই এসব চাল আমদানি করা হয়েছে এবং সব শুল্ক পরিশোধ করাও হয়েছে। কিন্তু কাস্টমসের ব্যর্থতায় আমরা তা খালাস করতে পারেনি। আগের ২ ভাগ শুল্কে চালগুলো ছাড় দেয়ার জন্য কাস্টমস ও এনবিআরের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
কাস্টমস কোনো সিদ্ধান্ত না দেয়ায় বন্দর থেকে চালগুলো খালাস করা যাচ্ছে না। হিলি স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট মুশফিকুর রহমান চৌধুরী জানান, অন্যবার বাজেটের আগে ও পরে সার্ভার বন্ধ থাকার কথা জানিয়ে নোটিশ দেয়া হলেও এবার তা দেয়া হয়নি।
চাল খালাসের জন্য ৬ জুন দুপুর ১২টার মধ্যে ৭৫টি বিল অব এন্ট্রি কাস্টমসে জমা হলেও কাস্টমসের সার্ভারের ধীরগতি থাকায় মাত্র ২৯টি বিল অব এন্ট্রি দাখিলের পর বাকিগুলো আর দাখিল করা যায়নি। এরপর হঠাৎ করে বিকাল ৩টা থেকে সার্ভার বন্ধ করে দেয়া হয়। এরপর আর কোনো পণ্যের বিল অব এন্টি দাখিল করা যায়নি।
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন জানান, বর্তমানে হিলি স্থলবন্দরে ৯ হাজার টন চাল নিয়ে ২১৫টি চালবাহী ট্রাক আটকা আছে। চালগুলো নষ্ট হলে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন।
হিলি স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট শাহীনুর রহমান শাহীন জানান, ৭ জুন থেকে এই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে কোনো চাল বাংলাদেশে আসেনি। শুল্ক বাড়ানোয় লোকসানের আশঙ্কায় চাল আমদানি করছেন না আমদানিকারকরা।