বাংলাদেশ ডিজিটাল হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে স্মার্টফোনের ব্যবহার। স্মার্টফোনের ওপর নির্ভরশীলতার কারণে আধুনকি জীবন এখন এই স্মার্টফোন ছাড়া চিন্তাই করা যায় না।
স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে স্মার্টফোনের চুরি। একটি স্মার্টফোন চুরি হলে ব্যবহারকারীর সব ডাটা, ফেইসবুক/গুগল/ ই-মেইল সবকিছুর Access চলে যায় চোরের হাতে এবং সাধারণ মানুষজন চরম বিড়ম্বনায় পড়ে ।
নারীরা আরো বেশি সমস্যার সম্মুখীন হয়। নারীদের স্মার্টফোন চুরি হওয়ার পর তারা প্রায়ই ব্লেকমেইলের শিকার হন। এসব বন্ধ করতে সম্প্রতি তৈরি করা হয়েছে একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ‘থামাও’। আর অ্যাপটি তৈরি করেছেন কয়েকজন তরুণ। তারা হলেন : নাসিফ সিদ্দিকী (একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), আহসান আসিম (কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, এআইইউবি), রাতুল রহমান (অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ও ফায়াজ বিন সালাম (কম্পিউটার সাইন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, এআইইউবি)
অ্যাপ তৈরির মূল উদ্যোক্তা নাসিফ সিদ্দিকী অ্যাপটি সম্পর্কে বলেন, ‘আমরা চাচ্ছিলাম এমন কিছু একটা করতে যাতে ব্লেকমেইল থামানো যায়। এখান থেকেই ‘থামাও’ এর শুরু । আন্তর্জাতিকভাবে অনেক অ্যাপ আছে যেগুলো ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডের ব্যবহারকারীদের কথা চিন্তা করে বানানো । থামাও একমাত্র অ্যাপ যেটি শুধু বাংলাদেশের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের কথা মাথায় রেখেই ডেভেলপ করা হয়েছে। আমরা শতাধিক স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সাথে কথা বলে থামাও-এর ফিচারের কাজ করেছি যাদের স্মার্টফোনটি বাংলাদেশে ২০১৭-১৮ সালে চুরি হয়েছে।’
নাসিফ আরো বলেন, ‘আমরা নিজেদের উদ্যোগেই একটি টিম বিল্ট করে থামাও-এর কাজ শুরু করে দেই। কোনো প্রোফিট মোটিভ থেকে না, শুধু- এভাবে এগুলো চলতে দেওয়া যায় না- এই চিন্তা থেকেই এর কাজ করেছি।’
Google Play Store এ অ্যাপটি দেওয়ার পর থেকেই প্রতিদিন শত শত মানুষের থেকে ই-মেইল- মেসেজ আসতে থাকে বলে জানান নাসিম। অ্যাপটি ব্যবহার করে নিরাপদ বোধ করার কথাই জানিয়েছেন স্মার্টফোন ইউজাররা।
অ্যাপটি যা করবে
ফোন চুরি করে চোর আর ফোনটি বন্ধ করতে পারবে না। এর কারণ মাত্র একটি ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমেই কোন ইন্টারনেট ছাড়া হারিয়ে যাওয়া ফোন রিসেট দিয়ে ফোন মেমোরি মুছে দেয়া যাবে। এতে চোর মোবাইল ফোনের কোন ডাটা, ফেইসবুক/গুগল/ ই-মেইল ইত্যাদির কোনো এক্সেস পাবে না। একটি খুদে বার্তার দিয়েই ইন্টারনেট ছাড়া হারিয়ে যাওয়া ফোনে উচ্চস্বরের সাইরেন বাজানো যা মিউট মোডেও কাজ করবে। এই অ্যাপ মোবাইল চার্য দেওয়া অবস্থায়/ হেডফোন লাগানো অবস্থায় চুরি থামাতে সক্ষম।
অ্যাপটি মোবাইল ফোনে ইন্সটল করতে হলে যেতে হবে গুগলের প্লে স্টোরে। সেখানে গিয়ে Thamao লিখে সার্চ দিয়ে অ্যাপটি বের করে ইন্সটল করতে হবে।
অ্যাপটির ফিচার নিচে দেওয়া হলো
Sms security
ইন্টারনেট ছাড়াই অন্য যেকোনো ফোন থেকে চুরি হয়ে যাওয়া ফোনে পুর্ব-নির্ধারিত sms দিয়ে ফোনকে control করা যাবে। এখানে রয়েছে –
1) “Thamao Reset” এর মাধ্যমে মেসেজ দিয়ে phone কে Reset factory করা যাবে, এর ফলে চোর ফোন নিয়ে গেলেও ইউজার তার নিরাপদ তথ্য মাত্র একটি Sms দিয়েই মুছে ফেলতে পারবে যাতে চোরের হাতে ব্যক্তিগত তথ্য যেন না যায়। মেয়েদেরকে এই ফিচারটি চোরদের দ্বারা ব্লেকমেইল হওয়া থেকে রক্ষা করবে।
3) “Thamao Siren” এর মাধ্যমে মেসেজের মাধ্যমে হারানো ফোনে siren বাজবে, এই siren উচ্চ শব্দ সাইলেন্ট মোডেও বাজবে। এমন কি কোনো ভাবে আনলক না করে সাউন্ড কমানো যাবে না, Volume down buttonও কাজ করবে না।
3)” Thamao Lock” এর মাধ্যমে মেসেজ দিয়েই ফোনটিকে লক করে দেয়া যাবে, তখন Power Button Disabled হয়ে যাবে. যার ফলে কোনোভাবেই আনলক না করে ফোনটি সাধারণভাবে বন্ধ করা যাবে না।
Smart Security
স্মার্ট সিকিউরিটিতে রয়েছে বেশ কিহু আধুনিক ফিচার। এই ফিচারগুলোর লক্ষ্য হচ্ছে চোরকে হাতেনাতে ধরা। Headphone, Charger এর সুবিধা নিয়েই এখানে চুরি হতে গেলে নির্দিষ্ট সময় ফোনে উচ্চ শব্দের সাইরেন বাজবে। এখানে রয়েছে –
1) Headphone Security
সার্ভেতে দেখা গিয়েছে হেডফোন লাগানো অবস্থায় চোর সেটা খুলে অগোচরে ফোনটি নিয়ে যায়। এই ফিচারটি চালু থাকলে ফোন লক অবস্থায় হেডফোন খুলে ফেললে বেজে উঠবে উচ্চস্বরের সাইরেন। বাস থেকে চুরি রক্ষায় এটি অত্যন্ত কার্যকরী।
2) Charging Security
একইভাবে সার্ভেতে দেখা গিয়েছে চার্যার লাগানো অবস্থায় চোর সেটা খুলে অগোচরে ফোনটি নিয়ে যায়। এই ফিচারটি চালু থাকলে ফোন লক অবস্থায় চার্যার খুলে ফেললে বেজে উঠবে উচ্চস্বরের সাইরেন। বাসা বা মেস থেকে ফোন চুরি রক্ষায় এটি অত্যন্ত কার্যকরী।
3) Power button disable
ফোন চুরি হবার পর চোর প্রথম সুযোগেই ফোনটির পাওয়ার অফ করে দেয়। এই ফিচারটি চালু থাকলে ফোন লকড থাকা অবস্থায় পাওয়ার বাটন চেপে ফোন বন্ধ করা যাবে না।
IMEI Security
আপনার ফোনটির মালিক যে আপনিই তার রেকর্ড রাখা যাবে থামাও-এ সয়ংক্রিয়ভাবে। এমনকি ব্যবহৃত ফোন কেনার আগে সার্চ করে দেখেও নিতে পারবেন ফোনটির মালিক আসল কি না।