পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক ড. পবিত্র সরকার। জন্ম ১৯৩৭ সালের ২৮ মার্চ তৎকালীন পূর্ববঙ্গের ঢাকার ধামরাইয়ে। উচ্চতর শিক্ষা লাভ করেছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, ফুলব্রাইট স্কলারশিপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত ছিলেন রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। এরপর পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য উচ্চশিক্ষা পর্ষদে ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন ছয় বছর। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন ২৭ বছর। এ পর্যন্ত তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৬৪টি। সম্পাদনা গ্রন্থসংখ্যা ৪৫টি। প্রবন্ধ-সাহিত্য তো বটেই, শিশুসাহিত্যেও রেখেছেন অনন্য অবদান। পাশাপাশি তিনি লিখেছেন কবিতা, গল্প, নাটক। করেছেন অভিনয়ও। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য তাঁকে সম্মানিত করেছে বাংলাদেশ সরকার। বিশিষ্ট এ ব্যক্তিত্বের সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন অঞ্জন আচার্য
যে বই বারবার পড়ি
দুটি বইয়ের নাম বলতে পারি। প্রথমটি রবীন্দ্রনাথের ‘গীতবিতান’। এটি আমি প্রায় সময়ই পড়ি। দ্বিতীয়টি মুহম্মদ জাফর ইকবালের শিশু-কিশোর বইগুলো। প্রতিটি বই-ই একাধিকবার পড়েছি, পড়ি।
যে বই পড়ব বলে রেখে দিয়েছি
জন মার্টিন এলিসের ‘অ্যাগেইনস্ট ডিকনস্ট্রাকশন’। ধীরে ধীরে পড়ছি। পড়ছি, আবার রেখে দিচ্ছি। আবার পড়ছি।
যে চলচ্চিত্র দাগ কেটে আছে মনে
এখন তো সেই অর্থে ছবি দেখা হয় না। তবে সত্যজিতের ‘পথের পাঁচালী’ ছবিটি সাতবার দেখেছিলাম।
যে গান গুনগুন করে গাই
একটা গান তো নয়। অনেক গানই আছে। আমার সকালটা শুরু হয় রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে। যখন যেটা মনে আসে, সেটাই গুনগুন করে গাই, চেঁচিয়ে গাই। কখনো কখনো হিন্দি কোনো গানও মাথায় আসে। একসময় প্রচুর হিন্দি ছবি দেখেছি।
প্রিয় যে কবিতার পঙ্ক্তি মনে পড়ে মাঝেমধ্যে
উত্তরটি ঠিক আগের প্রশ্নের মতোই। অনেক কবিতার লাইন মনে পড়ে। জীবনানন্দের ‘বনলতা সেন’ কবিতা মনে পড়ছে এ মুহূর্তে। এ ছাড়া মনে পড়ছে সুকান্তের, ‘হে মহাজীবন, আর এ কাব্য নয়/এবার কঠিন, কঠোর গদ্যে আনো,/পদ-লালিত্য-ঝঙ্কার মুছে যাক/গদ্যের কড়া হাতুড়িকে আজ হানো’।
খ্যাতিমান যে মানুষটি আমার বড় প্রিয়
নাট্যপরিচালক অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়।
যে ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না
কামিনী (রাত্রিবেলা আমাদের বাড়িতে একসময় ফুটত)
যা খেতে ভালোবাসি খুব
খেতে ভালোবাসি, কিন্তু স্বাস্থ্যকর নয়। সেটা হলো, তেলে ভাজা— পেঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ—এসব আর কী।
যা সহ্য করতে পারি না একেবারেই
অক্ষম মানুষের দম্ভ।
জীবনে যার কাছে সবচেয়ে বেশি ঋণী
অনেক মানুষের কাছেই তো ঋণী। জীবন চলার পথে কজনের কাছ থেকে কত কিছু কুড়িয়ে চলতে হয়। তবে একজনের নাম যদি বলতেই হয়, সে আমার স্ত্রী। তার কাছে আমার সবচেয়ে বেশি ঋণ।
যেমন নারী আমার পছন্দ
ব্যক্তিত্বসম্পন্ন, বুদ্ধিমতী নারী।
যেখানে যেতে ইচ্ছে করে
জীবনে যত জায়গায় যাওয়া হবে, ততই না যাওয়া হবে। এ জীবনে কুড়িটি দেশ ভ্রমণ করেছি। দেখে দেখে ভাবি, কতশত জায়গাই তো দেখিনি। আর ইচ্ছের কথা যদি বলিস, তবে বলব, নির্জন অরণ্যের কথা। ওখানে বাস করতে বড় ইচ্ছে করে।
যেভাবে সময় কাটাতে সবচেয়ে ভালো লাগে
বই পড়ে, গান শুনে।
যে স্বপ্নটি দেখে আসছি দীর্ঘদিন ধরে
এ বয়সে তেমন করে আর স্বপ্ন দেখি না। যাও দেখি, তা অনিবার্য এক বিষয় নিয়ে। সহজ, যন্ত্রণাহীন এক মৃত্যুর স্বপ্ন দেখি। আমার মৃত্যুটি যেন তেমনই হয়।
যে কারণে আমি লিখি
এককথায়, আমার কথাগুলো মানুষের কাছে জানাতে। লিখতে আমার ভালো লাগে। আমার ভালো লাগাগুলো অন্যের সঙ্গে শেয়ার করি। অন্যদেরও হয়তো সেটি পড়ে ভালো লাগবে, সেই ভাবনা থেকে লিখি।
নিজের যে বইটির প্রতি বিশেষ দুর্বলতা আছে
আমার ‘মৃত্যু’ বইটি।
ভালোবাসা মানে আমার কাছে…
দায়বদ্ধতা। যতখানি আমি চাইব, তার চেয়ে বেশি দেওয়ার জন্য আমি প্রস্তুত থাকব।
আমার চোখে আমার ভুল
অনেক রকম ভুলই তো আছে। ভুল হয়ে যায়। সিদ্ধান্তের ভুল। মানুষমাত্রই ভুল করে। আমিও এর বাইরে নই।
জীবনে যা এখনো হয়নি পাওয়া
নতুন করে আমার কিছুই প্রত্যাশা নেই, অতৃপ্তি নেই। যা পেয়েছি, ধরে নে, ওইটুকুই আমার প্রাপ্য ছিল, কোটা ছিল।
যে স্মৃতি এখনো চোখে ভাসে
আমার প্রথম সন্তানের মুখ দেখা।
যা হতে চেয়েছিলাম, পারিনি
যা হয়েছি, তাই হতে চেয়েছিলাম কিনা জানি না। তবে কিছু একটা হয়েছি। এ নিয়েই আমি তৃপ্ত।
জীবনের এ-প্রান্তে এসে যতটা সফল মনে হয় নিজেকে
বিষয়টি তো আপেক্ষিক। আমার চেয়ে কোটি কোটি মানুষ আছে, যারা অনেক বেশি সফল। আবার কোটি কোটি মানুষ আছে অসফল। আমি যতখানি হতে পেরেছি, তাতেই আমি সুখী।
কোনটা ভালো লাগে—পাহাড়, নাকি সমুদ্র?
পাহাড় এবং সমুদ্র পাশাপাশি থাকলে আমার বেশি ভালো লাগে। এমন অনেক জায়গাতেই এমনটা আছে। এর মধ্যে চট্টগ্রামের কক্সবাজার একটি।
কোনটা বেশি টানে—বর্ষার বৃষ্টি, নাকি শরতের নীল আকাশ?
বর্ষার বৃষ্টি খুব টানে।