আজ ২৬ মার্চ বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। গতকাল রোববার বিকেলে একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন এবং গণহত্যা দিবস উপলক্ষে প্রবন্ধ পাঠ ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। ২৫ মার্চের পাকিস্তানি গণহত্যা, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক ড. মো. মশিউর রহমান। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন নূহ-উল-আলম লেনিন ও ফিরোজ আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।
স্বাগত ভাষণে অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, ‘মহান স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে বাংলাদেশকে বেদনার সঙ্গে গণহত্যা দিবস পালন করতে হয়। আমরা আশা করি বিশ্ব সম্প্রদায় ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেবে।’
প্রাবন্ধিক বলেন, ’২৫ মার্চ ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ‘অপারশন সার্চলাইট’ নামে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। বাঙালির জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে সমূলে ধ্বংস বা নির্মূল করার অভিপ্রায় সামরিক বাহিনী চেয়েছিল সব কিছুর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করতে। একই সঙ্গে হত্যাযজ্ঞের মতো চরম ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করে নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনৈতিক আন্দোলন নসাৎ করতে।’ তিনি আরো বলেন, ‘২০১৭ সালে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ যখন ইউনেস্কোর ‘বিশ্ব ঐতিহ্য সম্পদ’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়, তখন বুঝতে বাকি থাকার কথা নয় আগামী দিনে আরো ভালো কিছু অপেক্ষা করছে। বাংলাদেশ আজ ভীষণভাবে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভাসিত একটি আত্মমর্যাদাবান জাতিরাষ্ট্র। এবারের গণহত্যা দিবস এবং স্বাধীনতা দিবসের প্রত্যাশা আমাদের সামনের পথচলা পরিপূর্ণভাবেই যেন বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের মধ্য দিয়ে অহর্নিশ বহমান থাকে।’
আলোচকদ্বয় বলেন, বাঙালি দুর্বল ও হীনবল বলে যে প্রচারণা চলে এসেছে, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আমরা তা ভুল প্রমাণ করেছি। নানা আন্দোলন-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় ৪৮-এ সূচিত ভাষা আন্দোলন ৫২-তে পরিণতি পায়। তারপর ন্যায্য দাবির নানান আন্দোলন একাত্তরে এসে মুক্তির মোহনায় মিলিত হয়।
সভাপতির বক্তব্যে ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী যে হত্যাযজ্ঞ চালায় আমরা তার দলিলপত্র প্রণয়ন করতে পেরেছি, যুদ্ধপরাধীদের বিচারের রায় বাস্তবায়ন করতে পেরেছি, এটা আমাদের সাফল্য। তবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রণীত সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধের ভাবাদর্শের রাষ্ট্র গঠনের পথে আমাদের অনেক দূর যাওয়ার আছে। একাত্তরে বাঙালি অসম্ভবকে সম্ভব করেছিল। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়েই ভবিষ্যৎ প্রজন্মও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাময় বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে সক্ষম হবে।’
মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন এবং ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক পরিচালিত হত্যাযজ্ঞে শহীদদের স্মরণে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে বাংলা একাডেমি দুদিনের এ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।