কোরবানি আরবি শব্দ। আরবি ধাতু ‘কুরবাতুন’ বা ‘কুরবান’ থেকে কোরবানি শব্দের উৎপত্তি। এর অর্থ ত্যাগের মাধ্যমে নৈকট্য লাভ। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভের আশায় নিজের অতিপ্রিয় কোন কিছু উৎসর্গ করাকে কোরবানি বলা হয়। শরিয়তের পরিভাষায়- গরু, মহিষ, উঠ, ছাগল, দুম্বা ও মেষজাতীয় হালাল পশু জিলহজ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখে আল্লাহর নামে জবাই করাকে কোরবানি বলা হয়। প্রতি বছর হিজরি সালের চান্দ্র মাসের ১০ই জিলহজ তারিখে ঈদুল আজহা সারা বিশ্বের মুসলমানদের কাছে কোরবানির অফুরন্ত আনন্দ-সওগাত ও ত্যাগের উজ্জ্বল মহিমা নিয়ে ফিরে আসে। এদিন বিশ্বের মুসলমানেরা বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় অনুপ্রাণিত হয়ে ত্যাগ ও কোরবানির আদর্শকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় পশু কোরবানির মাধ্যমে ঈদুল আজহার আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়।
কোরবানির সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ
মানব জাতি সৃস্টির আদিতে কোরবানির জন্যে অন্য আরেকটি নিয়ম প্রচলিত ছিল। আজকের মত জবেহ পদ্ধতি ছিল না। তখন কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট বস্তু বা জন্তুকে কোনো একটি উঁচু স্থানে বা পাহাড়ের চুড়ায় রেখে আসা হতো। যার কোরবানি আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কবুল করতেন, সেই বস্তু বা জন্তুটিকে আকাশ থেকে একটি গায়েবী বা অলৌকিক আগুনের ফুলকি এসে জ্বালিয়ে দিত। আর যে কোরবানিটি মহান আল্লাহ তাআলা কবুল করতেন না, সেটি যেভাবে রাখা হত সেভাবেই পড়ে থাকত। তখন কোরবানির মাংস খাওয়া যেত না। কারণ সম্পূর্ণটাই পুড়ে ছাই বা ভষ্ম হয়ে যেত। পরে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এই নিয়ম বাতিল করে কোরবানির পশুকে জবেহ করার নির্দেশ দেন এবং তার মাংস খাওয়া হালাল বা জায়েজ করেন।
ইসলামের ইতিহাসে বর্ণিত আছে যে, মানব জাতির আদি পিতা হজরত আদম (আঃ)-এর সময় থেকেই মূলতঃ এই কোরবানির প্রবর্তন। হজরত আদম (আঃ)-এর সন্তান জন্ম নিত জোড়ায় জোড়ায়। একটি মেয়ে ও একটি ছেলে। তাদের মধ্যে বিয়ে হতো এক জোড়ার মেয়ের সঙ্গে অন্য জোড়ার ছেলের। কিন্তু কাবিলের হবু বধূ হিসেবে অন্য জোড়ার যে মেয়ে ছিল সে সুন্দরী না হওয়ায় আর তার জোড়ার মেয়ে আকলিমা সুন্দরী হওয়ায় সে জিদ ধরল সে তার জোড়ার মেয়েকেই বিয়ে করবে। এই নিয়ে হাবিল আর কাবিলের মধ্যে শুরু হয় বিবাদ। এই বিবাদ মীমাংসার জন্য পিতা হজরত আদম (আঃ) বললেন- “তোমরা আল্লাহর দরবারে তোমাদের প্রিয় বস্তু উৎসর্গ কর। মহান আল্লার যার কোরবানি কবুল করবেন, তার সঙ্গেই আকলিমার বিয়ে হবে”। তখন পিতার সিদ্ধান্তে একমত হয়ে হাবিল একটি সুন্দর তাজা দুম্বা আর কাবিল তার জমির কিছু অপুষ্ট ফসল একটি পাহাড়ের চূড়ায় রেখে এলো। তখন আসমান থেকে একটি গায়েবি আগুনের ফুলকি এসে হাবিলের কোরবানিটি পুড়ে ছাই করে দিল। আর কাবিলের কোরবানি অবিকল যেমন রেখেছিল তেমনি পড়ে রইল। এতেই প্রমাণিত হল যে, কাবিলের সঙ্গে আকলিমার বিয়ে হতে পারে না। আর তখন থেকে এভাবেই কোরবানির প্রচলন শুরু হয়। কিন্তু বর্তমানে আমরা হাবিল ও কাবিলের অনুসরনে কোরবানি করছি না।
বর্তমানে আমরা মুসলমানরা যার অনুসরনে কোরবানি করছি তিনি মূলতঃ মুসলিম জাতির পিতা হজরত ইব্রাহিম (আঃ)। আমরা তাঁরই সুন্নত অনুসরণ করে চলছি শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর সমস্ত জীবনটাই ছিল নানা অগ্নি পরীক্ষা ও কোরবানিতে ভরপুর। তিনি বিভিন্ন সময় কঠিন থেকে কঠিনতর পরীক্ষার সম্মুখীন হন। এজন্যে তাঁকে প্রথমে পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনকে ত্যাগ করতে হল। এরপর অগ্নিকুন্ডে নিংক্ষিপ্ত হলেন। অত:পর এল মাতৃভূমি ‘ব্যাবিলন’ ত্যাগের কঠিন মুহূর্ত। সবশেষে জীবনের কঠিনতম পরীক্ষা ছিল বৃদ্ধ বয়সে তাঁর একমাত্র কিশোর পুত্র প্রাণপ্রিয় ইসমাঈল (আঃ) এর গলায় নিজ হস্তে ছুরি চালানো।
ইব্রাহিম (আঃ) এর প্রতি মহান আল্লাহর এ সব পরীক্ষা ছিল কঠিন থেকে কঠিনতর। কিন্তু তিনি প্রত্যেক কঠিন মুহূর্তকে হাসিমুখে স্বাভাবিকভাবে বরণ করে নিয়ে আল্লাহর নিকট প্রমাণ করে দিলেন যে, তাঁর নামাজ, কোরবানী, জীবন ও মরণ সবই বিশ্বপালনকর্তা মহান আল্লাহর জন্যই নিবেদিত।
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) আয়ু পেয়েছিলেন ১৬৫ বছর। ৮৫ বছর বয়স পর্যন্ত তাঁর কোন সন্তান জন্ম হয়নি। অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা ও দোয়ার পর অবশেষে তাকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ফেরেশতা মারফত একটি পুত্র সন্তানের সুসংবাদ দেন। তখন হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এবং তাঁর স্ত্রী হাজেরা (রাঃ) অবাক হয়ে আল্লাহর দূত জিবরাঈল (আঃ)কে প্রশ্ন করেন-“তা কি করে সম্ভব”? তখন ফেরেশতা জিবরাঈল (আঃ) তাদের উত্তর দিলেন- “আপনার পালনকর্তার কাছে এটা অসম্ভব কিছুই নয়”। তারপর হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ৮৭ বছর বয়সে এক পুত্র সন্তান লাভ করেন। বৃদ্ধ বয়সে যে সন্তান লাভ করেন সেই প্রিয় সন্তানও তাঁর জন্য নানা অগ্নিপরীক্ষার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সন্তান যখন একটু হাত-পা নাড়তে শিখলো, মায়াময় দুটি চোখ দিয়ে স্নেহময় পিতার হৃদয় মন আকর্ষণ করতে শিখলো, ঠিক তখনই হুকুম হলো স্ত্রী হাজেরা (রাঃ) ও দুগ্ধপোষ্য পুত্র ইসমাঈলকে সুদূর হেজাজের জনমানবহীন ধু-ধু মরু এলাকায় রেখে আসার জন্য। এ হুকুম পালনার্থে তিনি তার স্ত্রী ও শিশু সন্তানকে নিয়ে ফিলিস্তিন থেকে রওয়ানা হয়ে মক্কায় ঠিক যেখানে বর্তমান ‘বায়তুল্লাহ্ শরীফ’ অবস্থিত গায়েবী ইশারায় সেখানে রেখে আবার ফিলিস্তিন ফিরে যান। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ফিলিস্তিন থেকে মাঝে মধ্যে মক্কায় এসে স্ত্রী ও ছেলেকে দেখে যেতেন।
শিশুপুত্র ঈসমাঈল (আঃ) এর বয়স যখন ১১ বছর ঠিক তখন আল্লাহ তাআলা হযরত ইব্রাহিম (আঃ)কে জীবনের সবচেয়ে কঠিনতম পরীক্ষায় ফেললেন। তিনি পরীক্ষা করে দেখতে চাইলেন ইব্রাহিম (আঃ) কাকে বেশি ভালবাসেন? তিনি তাঁর ছেলেকে না আল্লাহকে? তাই মহান আল্লাহ তাকে স্বপ্ন দেখান তাঁর প্রিয় জিনিস উৎসর্গ করতে। ইব্রাহিম (আঃ) এ জন্যে অনেক পশু কোরবানি করেন। কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। বরং একই স্বপ্ন বারবার দেখতে লাগলেন। অবশেষে বুঝতে পারলেন মহান আল্লাহ স্বপ্নে তাঁর প্রিয় আদরের পুত্রকে কোরবানি দেয়ার ইঙ্গিত প্রদান করছেন। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) মনে মনে তাঁর এ কোরবানি বাস্তবায়নের একটা পরিকল্পনা আঁটলেন। কিশোর ইসমাঈল যখন পিতার সাথে চলাফেরা করতে পারেন ঠিক তখনি একদিন এল সেই মোক্ষম সময়। সে দিন ছিল ঈদুল আজহা। তিনি তাঁর স্ত্রী হাজেরা (রাঃ)কে বললেন ছেলেকে গোসল করিয়ে ঈদের নতুন জামা-কাপড় পরাতে। তাকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া হবে। জেনে কষ্ট পাবেন ভেবে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) স্ত্রী হাজেরা (রাঃ)কে আর কিছুই বললেন না। এ কথা শুনার পর স্ত্রী হাজেরা (রাঃ) ছেলেকে খুশি মনে গোসল করিয়ে সুন্দর জামা-কাপড় পরালেন। পেট ভরে ভাল ভাল খাবার খাওয়ালেন। নামাজ শেষে ইব্রাহিম (আঃ) তাঁর শিশুপুত্র ইসমাঈল (আঃ)কে সাথে নিয়ে বেড়ানোর উছিলায় মিনার জনমানবহীন নির্জন স্থানের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলেন।
তখন পথে শয়তান ইব্রাহিম (আঃ)কে ধোঁকা দিয়ে পথভ্রষ্ট করার চেষ্টা করে। কিন্তু তিনি পাথর ছুঁড়ে শতানকে তাড়াতে সক্ষম হন। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) পথিমধ্যে যখন তাঁর ছেলেকে নিজের অভিপ্রায়ের কথা ব্যক্ত করে বললেন-“প্রিয় বৎস! স্বপ্নে দেখেছি তোমাকে নিজ হাতে জবেহ করছি। বল, তোমার অভিমত কি?” যেমন পিতার প্রশ্ন ঠিক তেমনি সন্তানের জবাব। সুতরাং হযরত ইসমাঈল (আঃ) নিঃসংকোচে ও সন্তুষ্ট চিত্তে উত্তর দিলেন- ‘‘পিতা! যে বিষয়ে আপনি আদিষ্ট হয়েছেন তা পালন করুন। ইনশাআল্লাহ আমাকে আপনি ধৈর্য্যশীলদের মধ্যে পাবেন।’’ হযরত ইব্রাহিম (আঃ) গন্তব্যে পৌঁছে স্বীয় সন্তানের হাত-পা রশি দিয়ে শক্ত করে বেঁধে নেন। তখন ইসমাঈল (আঃ) একটুও বিচলিত হননি। বরং তার পিতাকে বললেন- পিতা! আপনার চোখ কাপড় দিয়ে ঢেকে নিন। নতুবা আমার গলায় ছুরি চালানোর সময় আপনার মনে দয়ার উদ্রেক হতে পারে। তখন আপনি আপনার উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরে যেতে পারেন”। এ কথা শোনার পর হজরত ইব্রাহিম (আঃ) নিজের চোখ কাপড় দিয়ে বন্ধ করেন। তারপর ধারালো ছুরি দিয়ে ছেলেকে যখন জবেহ করতে উদ্ধত ঠিক সে মুহূর্তে আকাশ থেকে গায়েবী আওয়াজ এল- ‘‘ইব্রাহিম ক্ষান্ত হও, অবশ্যই তুমি তোমার স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করে দেখালে। আমি মু’মিনদিগকে এভাবেই প্রতিদান দিয়ে থাকি। এটি অতি কঠিন পরীক্ষা। আমি এই মহান উৎসর্গ তথা জবেহের পরিবর্তে ইসমাঈলকে পরিত্রাণ দিলাম”।
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এ আওয়াজ শুনে হতচকিত হয়ে যান। দিগন্তলোকে দৃষ্টি দিয়ে দেখেন, বেহেশত থেকে হাতে একটা দুম্বা নিয়ে ফেরেস্তা জিব্রাঈল (আঃ) ‘‘আল্লাহু আকবর’’ ধ্বনি দিতে দিতে এগিয়ে আসছেন। হযরত ইব্রাহিম (আঃ) ও সেই মুহূর্তে বলে উঠলেন-‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবর’’। অত:পর হযরত ইসমাঈল (আঃ) এর পবিত্র জবানেও আত্মহারা অবস্থায় উচ্চারিত হল- ‘‘আল্লাহু আকবর অ-লিল্লাহিল হামদ।’’ পরক্ষণেই হযরত জিবরাঈল (আঃ) সেখানে উপস্থিত হয়ে ছুরির তলদেশ হতে ইসমাঈলকে টেনে নিয়ে দুম্বাটিকে শুইয়ে দেন এবং পর মুহূর্তে ইব্রাহিম (আঃ) এর হাতে তা জবেহ হয়ে যায়। অথচ আল্লাহর ইচ্ছায় সে তীক্ষ্ণধার ছুরি ইসমাঈল (আঃ)এর গলায় শত চেষ্টার পর একটি আচড়ও কাটল না। সেদিন হযরত ইব্রাহিম (আঃ) বিশুদ্ধ অন্তর নিয়েই তার প্রভুর নিকট উপস্থিত হয়েছিলেন। তাঁর এ অপূর্ব আত্মত্যাগের কারণেই আল্লাহপাক তাকে সমগ্র মুসলিম জাতির নেতা হিসেবে সম্মানিত করেছেন। তাই প্রতি ঈদুল আজহার নামাজেই দরুদের মাধ্যমে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করা হয় এবং সে কাহিনী বর্ণনা করা হয়। মূলতঃ এ ঘটনার পর থেকেই মুসলিম বিশ্বে পশু কোরবানির প্রচলন ঘটে।
এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন আচার-অনুষ্ঠান ও ধর্মীয় উৎসবে এবং ঈদুল আজহার সময় আমরাও মুসলিম জাতি হিসেবে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় বিগত প্রায় দেড় হাজার বছর ধরে কোরবানি করে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) সুন্নত পালন করে আসছি। এটা কোন সামাজিক বিধান, রীতি-নীতি বা অভ্যাস নয়। এ বিষয়ে মহানবি (সাঃ) বলেন- “ঈদুল আজহার দিনে কোরবানি করা সমস্ত নেক কাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। কোরবানির পশুর রক্ত মাটি স্পর্শ করার আগেই তা আল্লাহপাকের নিকট কবুল হয়ে যায়। কোরবানির পশুর শরীরে যত লোম আছে প্রতিটি লোমের পরিবর্তে একটি করে নেকি তার সে প্রিয় বান্দার আমলনামায় লিখে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করে না, সে যেন আমার ঈদের জামাতে না আসে”।
ইসলামি শরিয়তে কোরবানি সংক্রান্ত জরুরী কিছু বিধানঃ
ছদকাতুল ফিতর যার উপর ওয়াজিব কোরবানিও তার উপর ওয়াজিব। নিত্য প্রয়োজনীয় ব্যবহারের জিনিসপত্র বাদ দিয়ে যার নিকট হালাল উপায়ে অর্জিত সাড়ে ৫২ তোলা রূপা বা সাড়ে ৭ তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে ৫২ তোলা রূপার সমপরিমাণ মূল্যের অর্থ সম্পদ জমা থাকে তার উপর কোরবানি করা ওয়াজিব। মুসাফিরের উপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। জিলহজ্ব মাসের ১০ তারিখ ঈদুল আযহার নামাজের পর হতে ১২ তারিখের সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত কোরবানির সময়। এই তিন দিনের যে কোন দিন ইচ্ছা কোরবানি করা যাবে। তবে প্রথম দিন সর্বাপেক্ষা উত্তম। তারপর দ্বিতীয় দিন তারপর তৃতীয় দিন। ঈদের নামাজ শেষ না করে কোরবানি করা সঠিক ও শুদ্ধ নয়। নিজের কোরবানি নিজ হাতে করাই উত্তম। ১) ছাগল ২) ভেড়া ৩) দুম্বা বা মেষ ৪) গরু ৫) মহিষ ও ৬) উট এ ছয় প্রকার চতুষ্পদ প্রাণী ছাড়া অন্য কোন পশু কোরবানি করা জায়েয নয়। দাঁত হোক বা না হোক ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা পূর্ণ এক বছর হওয়া জরুরী। গরু ও মহিষ পূর্ণ দু’বছরের হতে হবে এবং উট পূর্ণ পাঁচ বছর। অন্ধ ও কানা পশুর কোরবানি গ্রহণযোগ্য নয়। কোন পশুর যদি এক চোখের তিন ভাগের একভাগ বা আরো বেশি দৃষ্টিশক্তি চলে যায় বা কোন কানের বা লেজের এক তৃতীয়াংশ কেটে যায় তাহলে ঐ পশুর কোরবানি গ্রহণযোগ্য হবে না। যে পশুর একটি দাঁতও অবশিষ্ট থাকে না সে পশুর কোরবানি গ্রহণযোগ্য নহে। যদি অধিকাংশ দাঁত বাকি থাকে তবে কোরবানি গ্রহণযোগ্য হবে। অতএব কোরবানির পশু কেনার সময় পশুটি হৃষ্ট-পুষ্ট, সুস্থ-সবল, তাজা, সুন্দর, নিখুঁত ও স্বাভাবিক আছে কিনা সে দিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখা জরুরী।
কোরবানির ফজিলত ও মর্যাদা সম্বন্ধে অজ্ঞ বলেই কেউ কেউ নামের জন্য লোক দেখানো কোরবানি করে থাকে। আবার অনেক লোক দুর্বল, স্বাস্থ্যহীন, রোগা এবং কম দামের পশু কোরবানি করে থাকেন। অথচ ইসলামের বিধান মতে প্রতিটি সন্তানের পরিবর্তেই আমাদেরকে পশু কোরবানি করতে হয়। তাই সবচেয়ে ভাল স্বাস্থ্যবান ও বলিষ্ঠ চতুস্পদ প্রাণী কোরবানি করা প্রয়োজন। অনেক সময় দেখা যায় কেউ কেউ সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করেন না। মনে রাখতে হবে, সামর্থ্যবান ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে কোরবানি ওয়াজিব।
এবারের ঈদ সবার জন্যে বহে আনুক অনাবিল আনন্দ, সুখ-সমৃদ্ধি ও ভ্রাতৃত্ববোধ। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবার অন্তরে প্রস্ফুটিত হোক মানবতার ফুল। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন যেন আমাদের প্রত্যেককে বিশুদ্ধ নিয়তের সাথে কোরবানি করার তওফিক দান করেন। আমিন # নিউ ইয়র্ক