গোলাম আশরাফ খান উজ্জ্বল,মঙ্গলবার, ৬ মার্চ ২০১৮, মুন্সিগঞ্জ নিউজ ডটকম: ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন দেশ সৃষ্টি করতে, উপমহাদেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিরা হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধ বা দাঙ্গার সৃষ্টি করে।
১৯৪৬ সাল থেকে আজ পর্যন্ত কোন না কোন অজুহাতে রায়ট বা দাঙ্গা হয়েছে। এ রায়টে বহু মুসলমান এবং হিন্দু নিহত হয়েছে। কয়েক লাখ মুসলমান ও হিন্দু নিজ বাস ভূমি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়েছে।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের জন্য রায়ট বা দাঙ্গা হয়। ১৯৪৭ সালের পর ভারত থেকে মুসলমান তারাতে দাঙ্গা হয়, আবার পাকিস্থান হতে হিন্দুদের তারাতে দাঙ্গা হতো। এসকল দাঙ্গার ঢেউ বাংলাদেশেও লেগেছিল।
১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তানের দাঙ্গার ঢেউ বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলায়ও লেগেছিল। মুন্সিগঞ্জ জেলার ছয়টি উপজেলায় বিভিন্ন সময় দাঙ্গার কারণে তিনজন নিহত হওয়ার তথ্য আমাদের হাতে রয়েছে। নিহত এই তিন ব্যক্তি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক। এ তিনজনের একজন মুন্সিগঞ্জ সদরের। অন্য দুইজন শ্রীনগর উপজেলার। গজারিয়া, টঙ্গীবাড়ী, লৌহজং ও সিরাজদিখান দাঙ্গার সময় কী অবস্থা বিরাজ করতো তা আমাদের জানা নেই। অনেক চেষ্টা করেও তথ্য সংগ্রহ করা যায়নি।
১৯৫০ সালে একটি দাঙ্গা ঘটেছিল মুন্সিগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলয়। এ উপজেলার ষোলঘর গ্রামের হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় অবিনাশ রায় নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়। এতে আরো ২৫ জন হিন্দু মুসলিম আহত হয় বলে তথ্য প্রদান করেন শ্রীনগর পাইলট গার্লস স্কুলের শিক্ষক নাসিরুল হক এবং সুপ্রিয়া সুবর্ণা।
এই দাঙ্গার মূল কারণটা কেউ পরিস্কার করে বলতে পারেননি। তবে ভারত পাকিস্থানের কোন ঘটনার জের ধরে ষোলঘরে দাঙ্গা বাঁধে।
১৯৬৪ সাল। কাশ্মিরের হযরতবাল মসজিদ হতে উগ্র হিন্দুরা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর চুল মোবারক চুরি করে নিয়ে যায় এবং দাঙ্গা বাধায়। এখবর প্রচার হওয়ার সাথে সাথে ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ দাঙ্গা প্রবলাকার ধারণ করেন।
এ দাঙ্গার রেশ মুন্সিগঞ্জেও লেগেছিল। ১৯৬৪ সালের দাঙ্গায় মুন্সিগঞ্জ শহর, পঞ্চসার, মিরকাদিম, মহাকালী, বজ্রযোগিনীতে বহু সংখ্যক হিন্দু মুসলমান আহত হয়। এ দাঙ্গা ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পরে এবং একজন নিহত হয়। নিহত ভূবতী রঞ্জন বসুর গ্রামের বাড়ি পঞ্চসার।
১৯৬৪ সালের দাঙ্গায় শ্রীনগর উপজেলার হাসরা গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন নিহত হয়। নিহত ব্যক্তির নাম ফটিক কবিরাজ। ফটিক কবিরাজের প্রকৃত নাম ফটিক দাস। সে প্রাণ ভয়ে খড়ের টেকির নিচে পালিয়ে ছিল। খড়ের টেকিতে আগুন ধরিয়ে দিলে সেখানেই ফটিক দাস পুড়ে মারা যায়। এ তথ্যটি দেন শ্রীনগর পাইলট গার্লস স্কুলের শিক্ষক সুপ্রিয়া সুবর্ণা।
১৯৯০ সালে ভারতে বাবরী মসজিদ ভেঙ্গে দেয় উগ্র হিন্দুরা উপমহাদেশ আবার ব্যাপক দাঙ্গা দেখা দেয়।
তবে মুন্সিগঞ্জ জেলায় সহিংসতা দেখা দেয়নি। মুন্সিগঞ্জ জেলার হিন্দু মুসলিম সবসময়ই সম্প্রিতির বন্ধনে আবদ্ধ। গলইয়া, দূর্গাপূজা ও ঈদে হিন্দু মুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের লোকেরা শুভেচ্ছা বিনিময় করে থাকে।