খাদ্যের অভাবে সুন্দরবনের বাঘ এখনও লোকালয়ে চলে আসছে। লোকালয়ে এলে এসব বাঘ মানুষসহ হামলে পড়ছে গবাদি পশুর ওপর। প্রায়ই এসব ঘটনা ঘটায় আতঙ্ক বাড়ছে সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলের মানুষদের মধ্যে।

এদিকে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকাগুলোতে গত ১৮ বছরে ৫০টি বাঘ পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এসময়কালে বাঘের আক্রমণে ২৩২ জন মানুষ নিহত হয়েছেন।

সর্বশেষ গত ২৩ জানুয়ারি ২০১৮ পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের জিউধরা স্টেশনের কাছে গুলিশাখালী গ্রামে বন বিভাগের চোখের সামনে গ্রামবাসী একটি বাঘ পিটিয়ে হত্যা করে । সুন্দরবনের কাছের জনপদ মোংলা উপজেলার চিলা ইউনিয়নের জয়মনি, বৌদ্ধমারী, কচুবুনিয়া, মোড়েলগঞ্জের গুলশাখালী, নিশানবাড়িয়া, আমুর বুনিয়া ও বলইবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের অধ্যাপক এ কে ফজলুল হক বলেন, ‘প্রথম কথা হলো খাদ্যের অভাবেই সুন্দরবনের বাঘ লোকালয়ে আসছে। এছাড়া পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না থাকায় চোরা শিকারীদের কারণে সুন্দরবন থেকে বাঘ হারিয়ে যাচ্ছে। প্রভাবশালীরাই মূলত বাঘ শিকারের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন বলেও জানান তিনি।

বাঘের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ার জন্য তিনি বনবিভাগের উদাসীনতাকে দায়ী করেন।

তিনি বলেন, প্রাকৃতিক পরিবেশে এমন কোনও পরিবর্তন ঘটেনি যে, সুন্দরবন থেকে বাঘের সংখ্যা এতো কমে যাবে। তাই চোরা শিকারীদের ঠেকাতে এখনই বনবিভাগের কর্তাব্যক্তিকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন।

সুন্দরবন পেশাজীবী সংগঠন ‘পশুর রিভার ওয়াটার কিপার’ এর সমন্বয়কারী মো. নূর আলম শেখ বলেন, খাদ্যের অভাবে সুন্দরবন থেকে বাঘ লোকালয়ে আসছে। বনের ভেতরে বাঘের যে খাবার-যেমন হরিণ, শূকর ইত্যাদি চোরা শিকারীদের কারণে ফুরিয়ে যাচ্ছে। তাই খাবার না পেয়ে বাঘ এখন লোকালয়ে এসে মানুষ আর গবাদি পশুর ওপর হামলে পড়ছে।

জানা গেছে, গত ২২ জুলাই রবিবার সুন্দরবন ইউনিয়নের বুরবুরিয়া গ্রামের আ. লতিফের বাড়ির গোয়াল থেকে দুটি গরু হারিয়ে যায়। তাদের অভিযোগ বাঘ এসে তাদের একটি গরু মেরে খেয়ে অর্ধেক ফেলে রেখে গেছে, বাকি গরুটি নিয়ে গেছে। এছাড়া প্রায়ই এলাকায় বাঘের আনাগোনা দেখা যায় বলেও স্থানীয়রা জানিয়েছে। এ অবস্থায় বাঘের অবাধ বিচরণ ঠেকাতে তারা রাত জেগে এলাকা পাহারা দিচ্ছেন বলে আ. লতিফ জানান।

বনবিভাগের সহকারী বন সংরক্ষক (খুলনা) আমির হোসেন চৌধুরী জানান, সুন্দরবনে প্রতি একশ’ বর্গ কিলোমিটারে চারটি বাঘ থাকতে পারে, এর ভেতরে নতুন কোনও বাঘ জন্ম নিলে ওই জায়গা থেকে বাঘ অন্য জায়গায় খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়বে।

তিনি আরও বলেন, আধিক্যের কারণেও অনেক সময় বাঘ লোকালয়ে আসে।

এদিকে আমির হোসেন আরও দাবি করেন, বিভিন্ন কারণে সুন্দরবনের বাঘ কমেছে ঠিকই, তবে বনবিভাগের কোনও গাফিলতি নাই। তাদের নিয়মিত অভিযানে চোরা শিকারীদের দৌরাত্ম্য কমেছে বলে তিনি দাবি করেন।

জাতিসংঘের আইইউসিএন বাঘকে বিপন্ন প্রাণী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে লাল তালিকাভুক্ত করেছে। ১৯৮২ সালে বাঘ জরিপে ৪৫৩টি, ২০০৪ সালের জরিপে ৪৪০টি এবং ২০১৫ সালে জরিপে সুন্দরবনে ১০৬ টি বাঘ রয়েছে বলে জানা গেছে।

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডি এফ ও) মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ সালে ক্যামেরা ট্রাপিং এর মাধ্যমে বাঘ জরিপ শুরু হয়ে ১২ মে শেষ হয়েছে। এখন ডাটা অ্যানালাইসিস করে রিপোর্ট দিলে সুন্দরবনে প্রকৃত বাঘের সংখ্যা কত তা জানা যাবে’।

ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের টিম লিডার আলমগীর জানান বাঘ লোকালয়ে আসলে আমরা তাকে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় বনে ফিরিয়ে দেই। এ পর্যন্ত বহু বন্যপ্রাণী বনে ফিরিয়ে দিয়েছি এটা আমাদের জন্য গর্বের এবং গৌরবের।

আজকালের খবর/এসএমএম

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here